সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

সর্বশক্তিমান মহা আলো

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

এ আলো, সে আলো, যে আলো অদ্বিতীয় একক সর্বশক্তিমান, যাঁর কোন উপমা নেই। সে আলোটির নাম হচ্ছে “অদ্বিতীয় একক আল্লাহ্”। প্রত্যেক আলোর উৎপত্তিস্থল রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ নামের নূরটি অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আলোটির উৎপত্তিস্থল নেই। যার উৎপত্তিস্থল নেই, তার আকার নেই। আকারের দৈর্ঘ্য প্রস্থ থাকে। নিরাকারের আকার নেই বলে, তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ নেই। সদা সর্বদা একই আলো, একইরূপে অবস্থান করছেন। তিনি সর্বব্যাপী, তাঁর দৃষ্টির আড়াল, স্রষ্টালোকের আল্লাহ্ নামের আলোর জগতের একটি অনু বা পরমাণু নেই। অনু-পরমাণুর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ আছে। আকার আছে বলেই দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ আছে। যে আলোর অণু বা পরমাণু নেই সে আকারহীন, অসীম-অনন্ত এবং সর্বশক্তিমান আলোর নামই ‘আল্লাহ্’। এ অনন্ত অসীম আলোর মধ্যেই সে আল্লাহ্ নাম আলোর সৃষ্ট জগত নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডল অবস্থিত বা আল্লাহ্ নামের সাগরের মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায় অবস্থিত। সুতরাং নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের অর্থাৎ (নূরুসসামাওয়াতি ওয়াল আরদ্) প্রদর্শিত আলো আল্লাহ্ নামের আলো কর্তৃক আবৃত তাই প্রতিয়মান হচ্ছে নভোমন্ডলের এবং ভূমন্ডলের যে জ্যোতির কথা বলা হচ্ছে উক্ত জ্যোতি ভূমন্ডলদ্বয়ের সৃষ্ট আলো নয়। তা আল্লাহর জ্যোতি, মন্ডল দ্বয়ের জ্যোতি সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। সৃষ্টির সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই। তাই প্রতিয়মান হচ্ছে নভোমন্ডলের এবং ভূমন্ডলের যে জ্যোতি, সে জ্যোতি কর্তৃক আবৃত নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের আলো আল্লাহ্ নয়। সুতরাং মন্ডলদ্বয়ের কোন ক্ষমতা নেই আলো সৃষ্টি করে। আল্লাহ্র আলো কর্তৃক আবৃত বা বেষ্টিত। অর্থাৎ আল্লাহ্ নামের আলো বা আল্লাহ্র সৃষ্টি। আল্লাহ্র সৃষ্টির নিজস্ব কোন আলো বা শক্তি নেই। আল্লাহ্ নামের আলোর বাণী (আল্লাহু খালাক্বাস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্) অর্থাৎ আসমান বা নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডল আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং সৃষ্টির নিজস্ব কোন আলো বা শক্তি থাকার কথা নয়। সৃষ্টির মধ্যে যে আলো বা শক্তি অনুভব বা প্রদর্শিত তা সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ প্রদত্ত।

নূর = আলো। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ১৮তম পারা সূরা নূর বাক্য নং-৩৫। আল্লাহু নূরুসসামাওয়াতি ওয়াল আরদি। অর্থ = আল্লাহ্ নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের জ্যোতি। মূলত নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডলের কোন জ্যাতি নেই। কারণ মন্ডলদ্বয় মহা স্রষ্টার সৃষ্টি। মন্ডলদ্বয় স্রষ্টার আলো বা জ্যোতিতে জ্যোতির্ময়। মন্ডলদ্বয়ের জ্যোতিতে আল্লাহ্ জ্যোতির্ময় নয়। আল্লাহর জ্যোতিতে মন্ডলদ্বয় জ্যোতির্ময়। মহা স্রষ্টা আল্লাহর বাণী “আল্লাহু খালাক্বাসসামাওয়াতি ওয়াল আরদি” অর্থাৎ মন্ডলদ্বয় আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ নামক-আলো বা নূরের কোন উৎপত্তিস্থল নেই। যৈতুনের তৈল কর্তৃক প্রজ্জলিত কাঁচের পত্রাবৃত প্রদীপ থেকে নির্গত আলো আল্লাহ্ নয়। যৈতুন এবং কাঁচের পত্রাবৃত প্রজ্জলিত দীপ-আল্লাহর স্ব-ইচ্ছায় সৃষ্টি করেছেন আপন খেয়ালে, যেমন করেছেন সমগ্র সৃষ্ট জগত। সেই যৈতুনের তৈল কর্তৃক প্রজ্জলিত প্রদীপ মহা আল্লাহ্ নামক মহা আলো কর্তৃক সৃষ্ট। লক্ষ্যণীয় বিষয়, স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে দৃশ্য অদৃশ্য যে জ্যোতি বা আলো স্রষ্টারই জ্যোতি। নক্ষত্রগুলোর জ্যোতি বা আলো যেমন সূর্যের আলো। এদের মধ্যে অর্থাৎ ভূমন্ডল, তথা মাটির জগতের অভ্যন্তরে অণু পরমাণুতে যে আলো দর্শন হয় তা স্রষ্টার অর্থাৎ আল্লাহর আলো সৃষ্টির কোন সৃষ্ট আলো হতে পারে না। যে যা সৃষ্টি করে সে তার মালিক সুতরাং সৃষ্টটি তার। যিনি সব সৃষ্টি করেছেন, সে সব সৃষ্ট সৃষ্টির মালিক তিনি। সুতরাং সবই তাঁর যখন তখন তাঁর খাস্ সৃষ্ট হাবীব-নূরে মুহাম্মদির নূরের মালিক আল্লাহ হবে না কেন? ওয়া = অর্থ ‘এবং’ আরর্দা অর্থ ‘মাটি’। কঠিন, তরল, জড়বস্তু, আত্মা অর্থাৎ প্রাণী জগতকে বুঝাচ্ছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, নূর অর্থাৎ আলো কর্তৃক সৃষ্টি করেছেন বা জ্যোতি দ্বারা আবৃত জ্যোতির্ময় করে রেখেছেন। আলোটি বা নূরটি কোথা হতে এলো? এ-নূর, আল্লাহ্ নামের যে সর্বশক্তিমান নূর সে নূর কর্তৃক এ নূর সৃষ্টি কিন্তু সর্ব প্রথম আল্লাহ্ নামের মহা নূর কর্তৃক মুহাম্মদ নামের তাঁর বিশেষ নূর- তাঁরই বন্ধু হিসেবে সদা-সর্বত্র সাথে সাথে একাকার করে থাকার জন্য বা রাখার জন্য সর্ব প্রথম তাঁর হাবীব মুহাম্মদ নামের নূর সৃষ্টি করেন। তাই ‘মুহাম্মদ’ নামের নূর সদা তাঁর সাথেই সর্বত্র বিরাজমান। তাঁর সৃষ্টি জগতের এমন কোন অণু পরমাণু বাকী নেই যেখানে তিনি এবং তার দোস্ত বা হাবীব নেই। সব কিছুর একটি শিকড় বা উৎপত্তিস্থল বা কেন্দ্র থাকে, সে কেন্দ্র বিন্দুটির দৈর্ঘ্য প্রস্থ থাকে। আল্লাহ্ নামক নূরটির মাপন চিহ্ন নেই। দৈর্ঘ্য প্রস্থ থাকলে আকার থাকে, যার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ নেই তার আকার কোথায়? অণু পরমাণু দৈর্ঘ্য প্রস্থ থাকে, তার আকারও থাকে, যেখানে অনু-পরমাণু নেই, তার দৈর্ঘ্য প্রস্থ বা আকার কোথায়?

সে একক্ই একটি মহা শক্তি সম্পন্ন আলো। উদ্ধৃত আলোটির নামই ‘আল্লাহ্’। এ আলোটি তাঁরই সৃষ্টি জগতের অণু-পরমাণুতে উপস্থিত রয়েছেন। তাঁর দর্শকগণ তাঁকে অর্থাৎ তাঁর নূরের আভাকে অর্থাৎ ছায়া সদৃশ্যকে দর্শন করেন। পূর্বেও উদ্ধৃত হয়েছে “ আল্লাহ্” নামক আলোর উত্থান বা উভ্যদয় কেন্দ্র বিন্দু নেই। তাঁর দৈর্ঘ্য প্রস্থ নেই। তার আকারও নেই, পতনও নেই। তিনি অনন্ত। তিনি ছিলেন আছেন এবং থাকবেন। তাঁর আলো দর্শনকারীগণের পক্ষ থেকে উদ্ধৃত, সে মহা আলোকের কোন প্রকার রূপের উপমা-উদাহরণ নেই। তাঁর রূপের বা আলোর ছায়া দর্শনকারী, মূসা (আঃ) আল্লাহ্র নূরের উপমা, উদাহরণ, রকম, মতো, ন্যায় বা ধরণ যেন অমূক রূপ সদৃশ্য এমন কোন উক্তি করেননি। তাঁর সে মহা আলোর কোন উপমা উদাহরণ নেই বলে, রূপকারগণ ধরণ বলেননি। তিনি তাঁর স্বরূপে রূপায়িত। স্ব-আলোতে আলোকিত। আপন জ্যোতিতে জ্যোতির্ময়। তিনি তাঁর স্বরূপে রূপমান, স্বশক্তিমান। তিনি উচ্চারিত, অনুচ্চারিত, কল্পিত, অনুভব চিন্তা ভাবনার তরঙ্গ ভাষার্থ বুঝতে পারেন বা শব্দ শ্রবণ করতে পারেন। তিনি পারেন না এমন কোন ভাষোক্তি নেই। তাঁর যে নূরকে তিনি খাস্ এবং তাঁর অতি প্রিয় মনে করেছেন সেই মহা নূর হতে মুহাম্মদ (দঃ) এর নূর সৃষ্টি করে আপন সাথে সাথী করে রেখেছেন। তাঁর সাথেই একাকার করে সর্বত্র বিরাজমান করছেন। মুহাম্মদ (দঃ) নামের নূর, নূরে মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর প্রশংসাকারী। তিনি আল্লাহর নূর হবেন না কেন?




তাই তাঁর নির্বাচিত খাস নূরটির নাম রেখেছেন, মুহাম্মদ (দঃ) মুহাম্মদ নামক আলোটি শুধু আল্লাহরই প্রশংসা করবেন। আল্লাহ প্রদত্ত ঋতীনীতি অর্থাৎ আল্লাহর প্রদত্ত বিধান তাঁর সৃষ্টি জগতে প্রচার করবেন। নূরে মহাম্মদ (দঃ) এর নূরাংশ থেকে নূরে মুহাম্মদ (দঃ) জগতে প্রেরণোদ্দেশ্যে নূর পদার্থের তৈরি তনু পোষাকে মানবের মতো করে পাঠিয়েছেন। তাই তিনি বলেছেন, (আনা বাশারুম মিছলুকুম ইউহা ইলাইয়া)= অর্থাৎ আমি তোমাদের মতো মানুষ, এখানে লক্ষনীয় বিষয়, “মতো” শব্দটি, গরিলা, সিমপাঞ্জি বা বানর যেমন মানুষের মতো কিন্তু তারা মানুষ নয়। নবী মহাম্মদ (দঃ) আমাদের সাদৃশ্য ঠিক আমাদের সাধারণ মানুষের পদার্থে তৈরি নয়। লক্ষ করুণ তাঁর পচিনা অর্থাৎ ঘাম থেকে সুঘ্রান বিকশি হয় তাঁর মূ-মোবারকের লালা মোবারক মিষ্টি মধুর, তাই তাঁর সাথী ছাহাবায়ে কিরামগণ তাঁর পচিনা মোবারককে আপন গায়ে বা শরীরে সুঘ্রান হিসেবে মেখে নিতেন, লালা মোবারক মিষ্টি মধুর ছিল বলে খেয়ে ফেলতেন। প্রতিয়মান হচ্ছে যে, নবী (দঃ) এর তনু বা শরীর মোবারক আমাদের শরীরের পদার্থের মতো নয় তিনি সম্পূর্ণ আমাদের হতে পৃথক পদার্থের তৈরী, তার সে পদার্থের মধ্যে আল্লাহর সাথে কথোপকথন যন্ত্র স্থাপিত রয়েছে তা আমাদের মধ্যে নেই সুতরাং তিনি আমাদের পদার্থের তৈরি মানুষ নয়। তিনি সম্পূর্ণ পৃথক আমাদের হতে আলাদা এক অতি মহা মানব, আমরা যে পদার্থের মানুষ তাকে সে পদার্থের তৈরি বলা মহাভুল তিনি অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর সাথে একাকার হয়ে আছেন। যেমন আধা গ্লাস পানির মধ্যে আধা গ্লাস দুধ ঢেলে দিলে যেমন পানি এবং দুধে মিলে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু লক্ষনীয় বিষয়। দুধ-পানি একাকার হলেও দুধ কিন্তু পানি নয় পানিও দুধ নয়। কিন্তু মিলানো অবস্থায় দুধ পানি থেকে পৃথক নয় পানিও কিন্তু দুধ থেকে পৃথক নয়। যদিও একাকার অবস্থায় আছে। তাঁরা যে পৃথক, পৃথকাবস্থায় আছে তা আমাদের সাধারণ দর্শন শক্তিতে ধরা পড়বে না যদি সে দর্শন যন্ত্র আমার মধ্যে না থাকে।
বিঃদ্র ঃ যিনি প্রথমে প্রশংসাকারী, তিনিই প্রশংসিত। প্রশংসাকারী না হয়ে, প্রশংসিত হতে পারেন না। তাই আল্লাহ তাঁর বন্ধুর নাম মুহাম্মদ রেখেছেন প্রশংসাকারী অর্থে কারণ তিনি আল্লাহর প্রশংসা কারী। তাই তিন আল্লাহর দরবারে প্রশংসিত হয়েছেন, অর্থাৎ আহ্মাদ নামে ভূষিত হয়েছেন প্রশংসার উচ্ছাসনে আসিন হয়েছেন পূর্বালোচনায় এলাম, সূর্য কিন্তু আলো নয়, আলো কিন্তু সূর্য নয়, সূর্য থেকে আলো পৃথক নয়, আলো থেকে সূর্য পৃথক নয়। তেমনি মুহাম্মাদি নূর, আল্লাহ্ থেকে পৃথক নয়, নূরে আল্লাহ, অর্থাৎ আল্লাহ্, মুহাম্মদ (দঃ) থেকে পৃথক নয়। মূল কথা আল্লাহ্ মুহাম্মদ (দঃ) নয় এবং মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহ নয় আল্লাহ স্বইচ্ছায় যা চাহেন করতে পারেন। ভাঙ্গা গড়া সবই তাঁর কর্ম তাঁরই সৃষ্টি, তা পারে না। মানব একটি কণা বা অণু গড়তে পারে না শুধু পারে ভাঙ্গতে। গড়েন আল্লাহ, ভাঙ্গে বান্দায়। এ ভাঙ্গার উত্তর বান্দাকে একদিন দিতে হবে। আলোর নিদ্রা জাগরণের প্রশ্ন নেই। তিনি সদা সতর্ক সচেতন সদা জাগরিত। তিনি শুনেন, বুঝেন, কথা বলেন, উত্তর দেন, তিনি সদা তাঁর সৃষ্টির মাঝে বিরাজ মান এবং তাঁর হাবীব বন্ধু নূরে মুহাম্মদ (দঃ) তাঁর সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ নামক মহা শক্তিমান বা সর্বশক্তিমান আলোটির আর কোন প্রতি আলো বা প্রতিশব্দ সূচক কোন শব্দ নেই। স্বয়ং একক অদ্বিতীয় মহা শক্তি ধর আলো। এর নামই “আল্লাহ”। কোন লিঙ্গান্তর শব্দ নেই। তাই তাঁর সৃষ্ট জগত সৃষ্টকুল তাঁরই প্রদত্ত নিয়ম নীতি মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে এবং হব্ েমহা প্রলয় পর্যন্ত


মহা স্রষ্টা আল্লাহর
মহা আদেশ দুটু
প্রথম আদেশটি “বিসমিল্লাহ”= অর্থাৎ “বিসমি”= অর্থাৎ নামে বা নাম দ্বারা, “আল্লাহর নামে” উদ্ধৃত মহা বাক্যটি। প্রত্যেক শুভ- বা বৈধ কর্মের প্রারম্ভে উচ্চারনাদেশ।

দ্বিতীয়টি, সম্মানের সাথে “দরূদ” এবং সালাম পাঠের আদেশ
প্রত্যেক শুভ কর্মের প্ররম্ভে “আল্লাহর নামে” বাক্যটি উচ্চারণ করার উদ্দেশ্য বা অর্থ হচ্ছে মহা সৃষ্টি কর্তা আল্লাহকে সাক্ষী রাখা। যেখানে আল্লাহকে সাক্ষী রাখা হবে সেখানে অবৈধতা কুচক্র তা বা শয়তানী চক্রতার স্থান নেই। কারণ সেখানে আল্লাহকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। সুতরাং যে ক্ষেত্রে যে বিষয়ের উপর মহান আল্লাকে সাক্ষী রাখা হয়, সে ক্ষেত্রে সে বিষয়ের মধ্যে কোন প্রকার অবৈধতা, অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা কোন চক্রের চক্রান্তের স্থান হবে না। কারণ আল্লাহ স্বয়ং উক্ত কর্মের ওপর দৃষ্টি রেখেছে এবং স্বয়ং স্বাক্ষী রয়েছেন। তাই উদ্ধৃতোক্তিটি অলঙ্ঘনীয়। বলা প্রয়োজন বলে বলা হলো “বিসমিল্লাহ্” অবতির্নের মাধ্যম জিব্রাইল (আঃ) নয় স্বয়ং আল্লাহ ইয়া শব্দটি উপস্থিত অনুউপস্থিত সর্বাবস্থায় ব্যবহার করা যায়। ইয়া শব্দটি আরবী, বাংলায় বলা হয়, হে, ওহে, ওগো, এইযে, স্ব, দিকে নির্দিষ্ট দৃষ্টি আকর্ষন করার লক্ষ্যে এ শব্দটি ব্যবহার হয় সম্ভোধন সূচক।নিকটস্থ দূরবর্তী অথবা পর্দারাডাল থেকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যেও এশব্দটি ব্যবহৃত হয়।

লক্ষ্য করা যাক, সৃস্টিকর্তা “মহান আল্লাহর মহা গ্রন্থের একটি আহবান জনিত উক্তি (ইয়া আই-ইউহাল্লাজীনা আমানূ) অর্থাৎ হে, ওহে, যারা আমাকে বিশ্বাস কর) তাঁর সৃষ্টিদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন বা আহবান বা ডাক দিয়ে বলছেন। মনে হয় যেন বহু দূর থেকে ডাক দিচ্ছেন, কিন্তু না, তিনি আমাদের এত নিকটে যে তাঁর মধ্যে আমদের মধ্যে কোন দূরত্ব্ নেই, আমাদের তনু আতœার প্রতিটি অণু পরমাণুতে বিরাজ করছেন। তিনি নেই এমন কোন অণু পরমাণু সৃষ্টি হয়নি। তিনি আমাদের দৃষ্টির আড়াল থেকে সব সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন। নূরে আল্লাহ দর্শন করার শক্তি সৃষ্টিরনেই যেমন তাঁরই দোস্থ নবী মূসা (আঃ) এর আবদার রক্ষা মানষে আপন নূরের ছায়া দর্শন করে ছিলেন। কিন্তু মূসা (আঃ) তা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং সে নূরের ছায়ার ঝলকে, কূহেতূর, পাথড়ের কিয়দাংশ জ্বলে কালো পাথরে পরিণত হয়। যা আজও বিশ্বমানব তা দর্শনাশে “কূহেতূর” পাহাড়ে গমন করেন।

আল্লাহ কিন্তু আকার নিয়ে এসে মানবকে বাস্তবে দাঁড়িয়ে আহবান সূচক “ইয়া” শব্দটি ব্যবহার করেননি। নবী মুহাম্মদ (দঃ) উপস্থিত অথবা অনুপস্থিত তিনি কিন্তু অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদ (দঃ) সদা সর্বত্র তাঁর দোস্থ বা হাবীব তাঁর মালিক তাঁর স্রষ্টা মাবূদে ইলাহী, অর্থাঃ আল্লাহর সাথে ফানাহফিল্লাহ্ অবস্থায় একাকার হয়ে, বিরাজ করছেন, তাঁর লক্ষ্যে “ইয়া” শব্দ ব্যবহারে অনিহা কেন? বরং তিনি বাস্তবে আমাদের মধ্যে এসেছেন বা তাঁকে মহা সর্ব মহা গ্রন্থ দিয়ে, নূর পদার্থের তনু পোষাক অর্থাৎ শরীর পোষাক পরিয়ে মানব আকার দিয়ে, আমাদের মধ্যে পাঠিয়েছেন। মানব জাতিকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করার লক্ষ্যে। শাসন করেছেন. দেশ পরিচালনা করেছেন। তাঁর অনুসারীগণের নিকট আকারে স্বপ্নের মাধ্যমে এবং তন্দ্রাবস্তায় স্ব-শরীরে নিজেকে প্রদর্শন করেন। এ শক্তি তাঁর দোস্থ আল্লাহরই দেয়া।
মহান স্রষ্টা আল্লাহর বাস্তাতা তাঁর সমস্ত সৃষ্টিজগত এবং স্বয়ং আমি বা আমরা। তিনি গঠন করেছেন, তিনি ধ্বংস করবেন, সবই তাঁর হতে আগমন এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে, অর্থাৎ সব সৃষ্ট ষ্রষ্টা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। এ অবস্থায় নশ্বর জগত সবকে ছাড়তে হবে। পূর্বোদ্ধৃতোক্তি বিসমিল্লাহ, পুনোর্ল্লোখিত হচ্ছে যে, বিসমিল্লাহ্ শরীফ স্বয়ং আল্লাহর নবী (দঃ) কে শিক্ষা দিয়ে আল্লাহ স্বয়ং নবী (দঃ) এর শিক্ষক হয়ে বিসমিল্লাহ্ শিক্ষা দানের মাধ্যমে কুরআনে পাকের ভিত্তিস্থাপন করে, তাঁর প্রদত্ত শান্তিনীতি ইসলাম নমক ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব স্বয়ং রাখলেন। নবী (দঃ) এর ‘মূ’ মোবারকের মাধ্যমে বিসমিল্লাহ শরীফ মানব জগতে প্রেরণ করেছেন বলেই মানব জান্তে পেরেছে যে, যখন যা যেখান থেকে প্রথম শ্রবন করা যায় বা পাওয়া যায় সেটাই প্রথম পাওয়া, তা বস্তু বা বাণী হতে পারে। নবী (দঃ) এর মাধ্যমে বিসমিল্লাহ পেয়েছে বলেই, “বিসমিল্লাহ” প্রথম শব্দ, কারণ “বিসমিল্লাহ” শরীফ, নবী (দঃ) কে জিব্রাইল (আঃ) শিক্ষাদেননি, খোদ স্রষ্টা আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই, বিসমিল্লাহ শরীফ আল্লাহর পক্ষ থেকে “স্বয়ং প্রেরিত হয়েছে, তাই এ বাক্যটি সম্পূর্ণ স্বাধীন স্বয়ং একটি সূরা বা আঁয়াত সুতরাং ১১৪ সূরা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং সর্ব প্রথম আগমন সংঘটিত হয়েছে। পরে ১৯ পারার সূরা “নমলে” কুরআনের বাক্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে এবং গারে হেরায় বিসমিল্লাহ শরীফের শানে নজুল সর্ব প্রথম সংঘটিত হয়েছে। তাই তাঁর নিজেস্ব আতœ পরিচিতি রয়েছে। বিসমিল্লাহ্ এর শানে নজুল প্রথম গারে হিরা পর্বতে অবতীর্ণ হয়েছে। পরে জিব্রাইল (আঃ) কর্তক প্রেরিত শব্দ “ইক্বরা, তাই এ শব্দটি দ্বিতীয়। উদ্ধৃত বিসমিল্লাহ বাক্যটি সৃষ্টি জগতের ভিত্তি। আল কুরআনের ভিত্তি, ইসলামের ভিত্তি এবং বিসমিল্লাহ্ শরীফই স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টি জগতের ভিত্তি অর্থাৎ অদ্বিতীয় একক আল্লাহর এবং সমগ্র সৃষ্ট, মহা প্রলয় পর্যন্ত একই নিয়মে চলতে থাকবে। এ মহা বাক্যটি যার মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন, তাঁর নাম মোবারক মু¤ম্মদ (দঃ) তিনি আল্লাহর প্রশংসাকারী এবং সৃষ্টি জগতের সেবক, আল্লাহ বলেছেন, যে আমার সৃষ্টির সেবা দেবে সে আমার সেবা দিলো। তাই মুহাম্মদ (দঃ) স্রষ্টার প্রশংসাকারী হলেন, পরে আল্লাহ কর্তৃক তাঁর কর্ম গুনের জন্যে “আহ্মাদ” নামে খিতাব লাভ করে প্রশংসিত হলেন। সৃষ্টির রহমত, করুনা, বরক্বত হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেন। প্রশংসাকারীই প্রশংসিত শব্দ উপাধি হিসেবে লাভ করেছেন। নবী (দঃ) আল্লাহর প্রশংসাকারী বিধায় মুহাম্মদ (দঃ) নামে ভূষিত হয়েছিলেন। মহান করুণাময় আল্লাহর, নবী (দঃ) আল্লাহর প্রশংসায় মত্তছিলেন বলেই, আল্লাহ তাঁকে আহমাদ নামে উপাধিতে ভূষিত করলেন। প্রশংসা না করে প্রশংসিত হতে পারে না। দ্বিতীয় উচ্চারিত শব্দ, “ইক্বরা” শব্দটির বিষয়। নবী (দঃ) এর মূ মোবারকের মাধ্যমে প্রথম বিসমিল্লাহ্ শরীফ মহান স্রষ্টা আল্লাহ কর্তৃক উচ্চারিত হওয়ায়, “বিসমিল্লাহ” শরীফই প্রথম অবতির্ণ শব্দ বা বাক্য বা সূরা। দ্বিতীয় শব্দ জিব্রাইল (আঃ) এর আনিত শব্দটি যখনই নবী (দঃ) এর মূ মোবারকের মাধ্যমে উচ্চারিত হলো, তখনই “ইক্বরা” শব্দটি দ্বিতীয় অবতির্ণ শব্দ হিসেবে পরিগণিত হলো। কারণ স্রষ্টার বা প্রতিপালকের নাম প্রথম উচ্চারণ করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন, তাই প্রতিপালক আল্লাহর নাম না নিয়ে “ইক্বরা” শব্দ উচ্চারিত হচ্ছিলো না। তাই প্রথম প্রতি পালকের নাম অর্থাৎ আল্লাহর নাম উচ্চারিত হলো। সুতরাং এ মহান গ্রন্থানুসারিগণ, প্রতি মঙ্গল কর্মের, অর্থাৎ প্রতি বৈধ কর্মের প্রারম্ভে “বিসমিল্লাহ্” উচ্চারণ করেন। বিসমিল্লাহ্ এমন একটি শব্দ যা একক নিরাকার মহান সৃষ্টি কর্তা মহা আলোর নাম হিসেবে স্থির রয়েছে। সে নাম সূচক শব্দটি হলো, “আল্লাহ” এ আল্লাহ নামটি নিয়ে যে কর্ম করবে সে কর্মে থাকবে স্বয়ং আল্লাহ নামের মহা আলোটি সাক্ষী বা সে কর্মের ভিত্তি হিসেবে, তাতে থাকবে বরক্বত, রহমত, করুণা, দয়া, বিনয়ীভাষণ।
বিঃদ্রঃ= আলো আমাদেরকে স্পর্শ করে, কিন্তু আমরা আলোকে স্পর্শ করতে পারি না। তাই মুহাম্মদী নূর এবং আল্লাহ নামের নূর, আমাদের শরীরে সর্বত্র বিরাজ করছে স্ব-স্ব শক্তিতে। তাই আমাদের কল্পিত, চিন্তিত ধ্যান দ্বারা দূর্বল এবং সবলদের নামাজ এবং নবী (দঃ) এর লক্ষ্যে সালাম পাঠ গ্রহণ করেন। সূর্যের আলো আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাহেরে, আলো আমাদেরকে স্পর্শ করে কিন্তু আমরা সূর্যের আলো স্পর্শ করতে পারি না। গ্লাসের, বা গোলক বলের মধ্যে দিনের বেলায় সূর্যের আলো ভর্তি বা পূর্ণ করে, মুক বন্ধাবস্থায় রেখে গভীর রাতে বাক্সটি উন্মুক্ত করলে, গোলক বলের ভেতরের রক্ষিত আলোটি প্রদর্শিত হবে কী? গোলক বলটির ভেতরাংশ আলো শূন্য হয়ে রয়ে গেলো। কিন্তু আলোটি স্ব-স্ব রূপের আলোতেই লীন হয়ে গেলো। আলোকে আমরা- আলো বলে অনুভব করি। কিন্তু আলোকে স্পর্শ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আলোটি আমাদের শরীরের এবং সৃষ্ট জগতে যত রূপের সৃষ্ট বস্তু বা প্রাণ রয়েছে, প্রত্যোকটি অণু পরমাণুতে আলো বর্তমান রয়েছে এবং থাকবে। সে আলো, ব্যতীত কোন বস্তু বা প্রাণ, তরল-কঠিন স্বতেজ-স্বচেতন থাকবে না। আল্লাহর সৃষ্ট কোন অণু পরমাণুকে ছিড়ে যেতে পারে না, ছেড়ে যাবে না, আলোর কোন আকার নেই যে, যে কেউ তাঁকে স্পর্শ করবে। এটা আলো-বলে-শুধু অনুভব করা যাবে। আপনি যদি মনে করেন তাঁর আকারে-আকারী। যার স্বীমা নেই-দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নেই, তাঁর আকার কোথায়? আলোটি এ স্বীমা পর্যন্ত আর আলো নেই এমন হলে, তখন আলোটির আকার ধরা যেতে পারতো। যার স্বীমা নেই, তাঁর আকারও নেই, তিনি একক নিরাকার, আলো গুলো যে আছে শুধু অনুভব বিশ্বাস করতে হবে। নূরে-আল্লাহর সাথে নূরে মুহাম্মদ (দঃ)  রয়েছেন। এতে অনুভব এবং বিশ্বাস করতে হবে, তবে সে বিশ্বাসী বা ঈমানদার হলো। তিনিই একমাত্র শক্তিমান আলো, “তিনি” অর্থাৎ আল্লাহ নামে স্থির আছেন। তিনি ঠান্ডা আলো এবং গরম আলো, অর্থাৎ জ্বালাময়ী রূপের আলো, যখন যা চাহেন করতে পারেন। সর্বশক্তিমান আলোর শক্তির শেষ নেই, হরেক বর্ণের আলো সৃষ্টি করতে পারেন। সৃষ্টির মধ্যে সর্ব প্রথম যে, আলো-সদা সর্বত্র তাঁরই সাথী হিসেবে সাথে থাকবে এবং তা প্রলয় পর্যন্ত আল্লাহর জমিনে, আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনার ব্যবস্থা করে যাবেন, তিনি, সর্ব স্রেষ্ঠ সৃষ্টি আলো যে আলো আল্লাহর হাবীব নামে পরিচিতি লাভ করবেন। সে আলোটির নাম মুহাম্মদ (দঃ) আহ্মাদ স্থির রেখেছিলেন। আমাদের মূল মুক্তি বানী হচ্ছে (লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ্) যা-কায় মনো বাক্যে একবার আবৃত্তি করলে সে নরকের জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে, জান্নাত, বা স্বর্গের উত্তরাধীকারী হিসেবে মালিকানা পেয়ে যায়, বটে কিন্তু ছাত্র, সন্তান, সন্ততীগণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আদেশ অমান্যকারীকে, আজাব, তথা, সাজা ভোগ করতে হয়। কিন্তু পাঠশালায় পড়ার এবং পিতৃ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় না।  চির কালের জন্যে যতক্ষন না মহা স্রষ্টা আল্লাহকে এবং তাঁর হাবীবকে অস্বীকার করছে। লক্ষ্য করা যাক মুক্তি বাণীটির প্রতি, মুক্তি বাণীর প্রথম অক্ষর, আরবী ভাষায় অক্ষরটি “লা” বাংলা অর্থ না বা নেই আরবী শব্দটি “ইলাহা” বাংলায় অর্থ হচ্ছে মাবূধ, অর্থাৎ উপাসনা পাওয়ার যোগ্য ইল্লা, বাংলায় অর্থ ব্যতীত, আল্লাহ্ নিরাকার অস্বীম তথা, স্বীমা-হীন, সর্বস্রষ্টা সর্বশক্তিমান, একটি মহা আলোর নাম। যার কোন লিঙ্গান্তর বা বিপরীত শব্দ বা অংশিদার নেই। তিনি সর্বে সর্বা একক স্ব-রূপে সর্বত্র বিরাজ করছেন। তাঁর রূপের বা আলোর কোন উপমা বা উদাহরণ নেই। আল্লাহর নামের সাথে-সাথে মুহাম্মদ (দঃ) নামটি যুক্ত কেন? মুহাম্মদ= অর্থ= প্রশংসাকারী, রাসূল= অর্থঃ প্রেরিত। রাসূলাল্লাহ্= অর্থাৎ আল্লাহর প্ররিত পুরুষ। মহা স্রষ্টা আল্লাহ যখন, তাঁর জগত সৃষ্টি করার ইচ্ছে পোষন করলেন, তখন সর্ব প্রথম তাঁর সহকারী, বা সাথী, তাঁর ইচ্ছেনোযায়ী সকল আলোর স্রেষ্ঠ আলো সৃষ্টি করে তাঁর নাম “মুহাম্মদ (দঃ) নাম স্থির করে আপন সাথে, সাথী করে, আপন নূরে “ফানাহ্” অর্থাৎ মিশ্রন করে, একাকারাবস্থায় আলমে যান্নাতে স্বীয় নামের সাথে যুক্ত করে তাঁর লিপি পটে লেখে রেখেছেন যা সর্বপ্রথম আদম (আঃ) এ মর্ত জগত থেকে দর্শন করে, সে আল্লাহর সাথীর নামে মুক্তির প্রার্থনা করে আপন ক্রটি বা দোষ থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন। সে আদম (আঃ) এর সন্তান বর্তমান মানব কুল।
রেসাল অর্থ পত্র যিনি আল্লাহর পত্র বহন করেন তাকে রাসূল বলা হয় অর্থাৎ পত্র বাহক, তিনি আল্লাহ সর্বশেষ পত্র বা গ্রন্থ অর্থাৎ মুক্ত বাণী ‘আল-কুরআন’ দিয়ে গেলেন বলেই তাঁকে রাসূলাল্লাহ্ বলা হয়।
বিঃদ্রঃ মহা আল্লাহর অবস্থান অসীমে, অসীমে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সীমিতাংশের নাম করণ করেছেন নভোমন্ডল এবং ভূমন্ডল। মন্ডল দ্বয় অসীমে একটি সীমার মধ্যে নভোমন্ডলের মধ্যেই ভূমন্ডল বা সৌরমন্ডলগুলো অবস্থান। সৌরমন্ডল বা মর্তমন্ডল গুলো, নীহারিকা, গ্ল্যাক্সি, কসমস, গ্রহ নক্ষত্র, মোট কথা স্রষ্টার যত সৃষ্টি রয়েছে, সবই সীমিত নভোসীমায় অবস্থিত। এ নভোসীমার বাহেরে অর্থাৎ আল্লাহ নামক অসীম শক্তির অসীমে আর কোন সৌরমন্ডল বা মর্তমন্ডল নেই। সুতরাং আর কোন আবিষ্কারের অবকাশ নেই।

দ্বিতীয়ত, সম্মানের সাথে ‘দরুদ’ এবং নবী (দ:) এর ওপর সালাম পাঠের মহা আদেশ। লক্ষণীয় বিষয়, সর্বশক্তিমান, আল্লাহ, কুরআন, শরীফের কোথাও এমন উক্তি করেননি, যেমন করেছেন নবী (দ:) এর ওপর সম্মানের সাথে ‘দরুদ’ এবং সালাম পাঠেরোক্তি। যেমন আমি এবং আমার ফেরেশতাগণ আমার নবী (স:) এর ওপর দরুদ আদবের সাথে সালাম, তথা সালামত, করুণা, বারক্বাত,রহমত সূচক শব্দ পাঠ করি, তোমরাও আমার অনুসরণ কর! লক্ষ্য করুণ আল্লাহর যে কোন আদেশ লঙ্ঘনকারী, জান্নাত, তথা স্বর্গ থেকে বঞ্চিত হবে। যেমন সংসদের কোন একটি সাংসদ যদি উক্ত সংসদের সংবিধানের একটি বিধান লঙ্ঘন করে সে সাংসদের স্থান আর উক্ত সংসদে নেই। এমনি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রদত্ত অতুলনীয় মহা সংবিধান ‘আল-কুরআন’ আল কুরআনের মহাবাণী আল্লাহর মহা উক্তি মহা বিধানের অতুলনীয় মহা বিধান লঙ্ঘন করে  চলেছে, মুসলিম জগতের একটি বিরাট অংশ। উদ্ধৃত মহা বাণী বা মহোউক্তি সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করেছে। উদ্ধৃত বাণীটির ন্যায় কুরআন শরীফের, কোথাও আল্লাহ এমন বাণী প্রয়োগ করেননি। যদিও নামায সম্পর্কে ৮২ বার বলেছেন, নামায কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে। উদ্ধৃত বাণীর ন্যায় এমন উক্তি করেননি, যে, আমি এবং আমার ফেরেশতাগণ নামায পড়ে, তোমরাও সম্মানের সাথে নামায ক্বায়েম কর। রোজা, যাক্বাত, এবং হজ্জ সম্পর্কেও এমন উক্তি করেননি। সুতরাং প্রতিয়মান হচ্ছে যে, “বিস্মিল্লাহ্” সমগ্র সৃষ্টি জগতের ভিত্তি এবং সর্বমহা গ্রন্থ অবতীর্ণের সর্ব প্রথম আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বাধীন অবতীর্ণ শব্দ বা সূরা “বিসমিল্লাহ” বাক্যটি স্বয়ং একটি অতুলনীয় সর্বোৎকৃষ্টতম বাক্য। এ বিসমিল্লাহ বাক্যটি পূর্বেও ছিলো বলে, ১৯ পারার সূরা নমলে উদ্ধৃত করে নবী (দ:) কে অবগত করান তাই বিসমিল্লাহ শরীফের আঁয়াত বা বাক্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো। স্রষ্টার সৃষ্টির জীবের মধ্যে উত্তম জীব মানব। মানব যখন সভ্যতা ছেড়ে অসভ্যতার জগতে প্রবেশ করে এবং যে সমাজ সভ্যতা হারিয়ে ফেলে, সে সমাজ বা রাষ্ট্র আদর্শ সমাজ বা রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হতে পারে না। সেখানে ন্যায়, সততা, সত্যতা, সভ্যতা, মানবতা, লজ্জা মান্যতা, আদর, স্নেহতা, পবিত্রতা, ভালবাসা থাকে না। জীব এবং বস্তু তরল বা কঠিনে আপন-আপন, ধর্মের নীতিতে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তা চিরকাল প্রতিষ্ঠিত থাকবে। মানব যখন অমানবতার জগতে প্রবেশ করে তখনি মহা মানব, কবি দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে, ধর্মহীনতার কোন মূল্যায়ন হয় না। ধর্মহীন বস্তু বা পদার্থের কোন মূল্য নেই, যেমন চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ, আকর্ষণ শক্তি যদি  না থাকে সে চুম্বকের কোন মূল্যায়ন হয় না। যা ব্যবহার যোগ্য নয় বুঝতে হবে তাতে ব্যবহারের যোগ্যতা পবিত্রতা, বৈধতা, কার্যক্রম নেই সুতরাং অনুমেয় হচ্ছে যে, যা ব্যবহার যোগ্য নয় তা মূল্যহীন। যা মূল্যহীন তা অনাদৃত। সকল তরল, কঠিন, বস্তু, পদার্থ, প্রাণ স্রষ্টা থেকে ধর্ম প্রাপ্ত হয়েছে। যেমন চুম্বক পেয়েছে আকর্ষণ ধর্ম তার কর্মই আকর্ষণ করা, অন্যটা নয়। পানির ধর্ম বৃক্ষ তথা উদ্ভিদ জগতে বা প্রাণ জগতে বর্ষিত হয়ে সতেজ, সচেতন করা। তৃষ্ণার্থের, পিপাসা নিবারণ করা। বৃক্ষের ধর্ম অক্সিজেন, ছায়া এবং ফল দান করা। মানব ব্যতীত সকল জগত যে ধর্ম পেয়েছে সে, সে ধর্ম মতে কর্ম করে যাচ্ছে। অন্য কিছু করার মতো বা আপন মতে রুপান্তর করে ভোগ করার জ্ঞান বা বিবেক প্রাপ্ত হয়নি। একমাত্র মানবই তা পেয়েছে। স্রষ্টার সৃষ্টি জগতকে বিভিন্ন রূপে রুপান্তর করে ভোগছে তাই তাদের মধ্যে দিক নিদের্শক মহামানব প্রেরিত হন। তাই আক্বল জ্ঞান, প্রাপ্তির মূল্য দিতে হবে। অবৈধকে পরিহার করে বৈধতাকে প্রাধন্য দিয়ে। প্রতিয়মান হচ্ছে যে, মানবজাতির জন্য ধর্মই কর্ম, কর্মই ধর্ম নয়। কারণ অবৈধতা জ্ঞান বিবেকের কর্ম নয় বলে, কর্ম হিসেবে গণ্য হয় না। তাই মানবজাতির কর্মই ধর্ম নয়, ধর্মই কর্ম, ধর্মীয় দৃষ্টিতে যা গ্রহণীয় তাকে কর্ম হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। অন্য সব সৃষ্টি জগতে নির্দিষ্ট যে কর্মটি প্রাপ্ত হচ্ছে তাছাড়া অন্যটা করার ক্ষমতা নেই বিধায় আপন-আপন প্রাপ্ত কর্মটি সম্পন্ন করে যায়। চুম্বকের কর্ম বা ধর্ম একটাই, আকর্ষণ করা। তার এ আকর্ষণ শক্তি হারিয়ে গেলে তার কোন মূল্য নেই কারণ সে কর্মহীনাবস্থায়, এখন সে নিষ্প্রাণ প্রাণহীনকে মৃত বলা হয়। তার কোন মূল্যায়ন নেই, মূল্যহীন নি®প্রাণ একটি জড় বস্তু মাত্র। সৃষ্টি জগতের অন্য কোন জীব, বস্তু, প্রাণের স্রষ্টার সৃষ্টির মর্ম বুঝার রূপ রং রস  আপন চাওয়া বিবেক মোতাবেক প্রস্তুত করে ভোগ করার মতো ক্ষমতা নেই। কিন্তু মানব, তা পারে কারণ তারা বৈধ-অবৈধ বুঝার মতো আক্বল জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছে। তারা জ্ঞান থেকে বাচতে শিখেছে। অসত্যতা, অসভ্যতা, তাদের কর্ম নয় মহামানব কর্তৃক আনিত মহা গ্রন্থের বিধান পালন, তাদের ধর্ম, ধর্মীয় দৃষ্টিতে যা গ্রহণীয় তা-ই তাদের কর্ম বা ধর্ম। সুতরাং মানবজাতির জন্য ধর্মই কর্ম যা ধর্ম নয় তা কর্ম নয়। তাই মানবের জন্য ধর্মই কর্ম। কর্মই ধর্ম বাক্যটি মানবের তরে নয়। মহামানবগণের মাধ্যমে অবতীর্ণ বিধি-বিধান অর্থাৎ সর্বশক্তিমান অপরূপ শক্তিধর “আল্লাহ্” নামক আলোর প্রদত্ত বিধান অনুসরণেই অসভ্যতার সমাজ, সভ্য সমাজে পরিণত হয়। মহামানবগণ নিজেস্ব কোন বাণী প্রয়োগ করার অনুমতি প্রাপ্ত হন না। মহামানবগণ স্রষ্টা হতে যে বাণী প্রাপ্ত হন, তাকে স্রষ্টার বিধান বাণী তথা নীতি বাণী বলা হয়। স্রষ্টার বাণীগুলো হতে, যে কোন একটি বাক্য বা বাণীকে উপেক্ষা, অবহেলা, এঙ্কার, তুচ্ছ, এবং অবমূল্যায়ন করে বা ত্যাগ করলে, স্রষ্টা প্রদত্ত সে বাণী বা বিধানের সীমায় অবস্থান করার অধিকার রাখে না বা সে, সে ধর্মের আওতাভুক্ত থাকবে না। “কুরআনে কারীমের সর্বস্রেষ্ট বাক্যটির বিষয় আলোচনা”

সর্ব স্রেষ্ট বাক্যটি পারা নং ২২ (বাইশ) কুরআনে কারীমের বাইশতমাংশের ৫৬তম বাক্যটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে বুঝা যা যে, বাক্যটি কুরআনে কারীমের সকল বাক্য বা আদেশ থেকে সর্বোত্তম বাক্য বা আদেশ। মহা গ্রন্থ আল কুরআনে কোথাও এমন বাক্যোক্তি করা হয়নি যে, আমিও করি আমার ফেরেস্তারাও অর্থাৎ আমার দূতেরাও করে, হে আমার বিশ্বাসীগণ, আমার কৃত কর্মটি তোমরাও সম্মানের সাথে সম্পূর্ণ কর!। পূর্বোদ্ধৃত বাক্যটি হলো “ইন্নাল্লাহা= নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ এবং আমার দূত বা ফেরেস্তাগণ ছোয়াল্লু আলাইহি অর্থাৎ তাঁর ওপর দরুদ পড়ি অর্থাৎ দোয়া তথা রহমত, বারক্বাত, করুণা, বর্ষণ করি আলান নাবীই, আলা অর্থ ওপর অর্থাৎ আমার দোস্ত আমার হাবীবের ওপর অর্থাৎ। আমার নবীর ওপর তথা মুহাম্মাদ (স:) এর ওপর। করুণাময় আল্লাহ করুণার সাথে বলছেন, ইয়া- অর্থাৎ হে, ওহে  ওগো এই যে, তোমরা যারা আমার ওপর বিশ্বাস করেছ, সন্ধোধন সূচক হে আমার বিশ্বাসীগণ তোমরাও আমার দোস্ত, হাবীব, মুহাম্মাদ (দ:) এর ওপর, দরুদ অর্থাৎ দোয়া করুণা, রহমত, বারক্বাত, সূচক শব্দ পাঠ কর বা রহমত বর্ষণ কর। এবং সম্মানের সাথে তাজীমের সাথে সালাম পাঠ কর তথা সালামত শান্তি বর্ষণ কর! পূর্ণ বাক্যটি (ইন্নাল্লাহা-ওয়া-মালাই=কাতাহু ইউ ছোয়াল্লাুনা আলান্নাবীই ইয়া-আই-ইউহাল্লাজীনা- আমানু ছোয়াল্লু আলাইহী ওয়া সাল্লেমু তাসুলীমা”)। আমি এবং আমার ফেরেস্তাগণ নবী (দ:) এর ওপর দরুদ পড়ি, হে, আমার বিশ্বাসীগণ তোমরাও সম্মানের অর্থাৎ তাজীমের সাথে দরুদ এবং সালাম পাঠ কর। মহাগ্রন্থ কুরআনে কারীমের উদ্ধৃতোক্তিটি সর্বোৎকৃষ্টতম উক্তি, যে কর্তৃক লঙ্ঘীত হবে সে আল্লাহর রহমত, বরক্বাত, করুণা এবং জান্নাত অর্থাৎ স্বর্গ থেকে বঞ্চিত হবে। আল্লাহর, সে আদেশ সমূহের মধ্যে সর্বোত্তম সর্বোৎকৃষ্টতম সর্বপ্রথম আদেশটির প্রতি দৃষ্টি বিবদ্ধ করা যাক।  জিব্রাঈল (আ:) এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম সর্বপ্রধান আদেশ সূচকোক্তিটি, (ইক্বরা বিসমি রাব্বি কাল্লাজী খালাক) উদ্ধৃতোক্তিটি উচ্চারিত হওয়ার পূর্বে জিব্রাঈল (আ:) এবং নবী (দ:) এর মধ্যে আলীঙ্গন হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি শিক্ষাপ্রাপ্ত, উচ্চারিত শব্দটি-ই  কুরআনে কারীমে সর্বপ্রথম উচ্চারিত শব্দ। ‘ইক্বরা’ প্রথম উচ্চারিত শব্দ নয় প্রথম  উচ্চারিত শব্দটি ব্যতীত, নবী পাক (দ:) (ইক্বরা) উচ্চারণ করেননি। যাঁর নাম উচ্চারণান্তে ইক্বরা শব্দটি পাঠের আর্দিষ্ট হচ্ছেন। তাঁর সে নাম সূচক শব্দটি হচ্ছে, (আল্লাহ) এ আল্লাহ নামে বাক্যটি উচ্চারণান্তে ইক্বরা শব্দ উচ্চারণ করতে আর্দিষ্ট হচ্ছেন অর্থাৎ (আল্লাহর নামে) বাক্যটি “বিসমিল্লাহ্”। বিশেষ লক্ষণীয় বিষয়ঃ নামাযের মধ্যে যে দরুদে ইব্রাহীম (আ:) এবং সালাম পাঠ করা হয় তা হচ্ছে যে তাশাহুদের মধ্যে পাঠের জন্য নির্দিষ্ট। আল্লাহ এবং ফেরেস্তাগণ দরুদ এবং সালাম পাঠ করেন। যে কোন সময় পবিত্রাবস্থায় পাঠ করতে হয় এবং করার বিশেষ আদেশ আল্লাহ এবং ফেরেস্তাগণের খাস দরুদ এবং সালাম সর্বাবস্থায় সর্ব জায়গায় পাঠ করা যায় তবে স্থান এবং শরীর পাক পবিত্র থাকা উত্তম।

বিঃদ্রঃ নামাযের যে “দরুদ এবং সালাম পড়ি নবী (দ:) এর তাঁর স্বজনগণের অর্থাৎ আলে রাসূলগণের উপর, ইব্রাহীম (আ:) এর এবং আলে ইব্রাহীম (আ:) এর ওপর শান্তি, দয়া, করুণা, রহমত, এবং বারক্বাত, বর্ষণ লক্ষ্যে পাঠ করা হয়। লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, “আসসালামু আলাইনা” উদ্ধৃত বাক্যে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে যে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তাঁরই  বন্ধু নবী (দ:) এর ওপর স্বয়ং আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে রহমত এবং বরক্বাত বর্ষণ করেছেন। দ্বিতীয়টিতে নবী মুহাম্মাদ (দ:) আসসালামু- আলাইকুম বলে তাঁর অনুসারী অর্থাৎ তাঁর উম্মাতগণের জন্য আল্লাহর নিকট শান্তি রহমত, বারক্বত, কামনা করেছেন। কিন্তু ২২ (বাইশতম) পারার সূরা (আহজাবের) ৫৬তম আয়াত বা বাক্যের মধ্যে যে সালাম শব্দ উচ্চারিত হয়েছে এবং দরুদের কথা বলা  হচ্ছে তা এক নয়। এক হলে (ছোয়াল্লু) এবং সাল্লেমু তাসলিমা পৃথক-পৃথক ভাবে বলা হতো না। দরূদ শরীফ যতই বেশী-বেশী পাঠ করা হয়। ত-ততই ভালো, কিন্তু নবী (দ:) এর ওপর আল্লাহর আদেশ মতে সম্মানের সাথে প্রদান বা পাঠ না করলে, আল্লাহর বিশেষ আদেশ লঙ্ঘনকারী হিসেবে গণ্য, তখন স্বর্গ বা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো এবং মুনাফীক, নিমকহারাম, নাফরমান ও ভ্রষ্ট পথের পথিক হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে রিক্ত হস্তে মুমীনগণ হতে দূর থেকে দূরান্তরে ছিটকে নরক গহ্বরে পতিত হয়ে চির তরে ধ্বংশের পথে ধাবিত হবে। আল্লাহর এ মহান আবদারজনীত উক্তি বা আদেশটি সম্পর্কে সম্মানীত ওলামায়ে কিরামগণ বিশেষ ভাবে অবগত বা এ বিষয়ে বিশেষাভিজ্ঞ। এ মহা আবদারজনীত উক্তিটি নিশ্চয়ই-নিশ্চয়ই আমি এবং আমার দূত বা ফেরেস্তাগণ আমার হাবীব মুহাম্মাদ (দ:) এর ওপর দরূদ পাঠ বা পড়ি অর্থাৎ রহমত, বারক্বাত, দয়া, করুণা, শান্তি, সালামত বর্ষণ করি। বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামগণ যখন অবগত তখন লেখার প্রয়োজন কেন? উদ্ধৃত উক্তি সম্পর্কে সকল অবগত নয় বিধায় লেখতে হয়। মানবজাতির মুক্তির পথ প্রদর্শক হিসেবে নবী মুহাম্মাদ (দ:) কুরআন এবং হাদীস শরীফ রেখে গেছেন। প্রত্যেক উম্মাতি মুহাম্মাদীগণের তা অবশ্যাবশ্যই অনুসরণীয়  বা অনুকরণীয় বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় “কুরআন”,                             


এ সম্পর্কে সম্মানিত ওলামায়ে কিরামগণ অবগত থাকা সত্বেও লেখার প্রয়োজন কেন বোধ করলাম। কারণটি হচ্ছে, আমি, বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন স্থানে যেমন- বান্দ্রা, যোগেশ্বরী, মালুনি, মালাড, ইত্যাদি কয়েক স্থানে  এবং দিল্লী, আজমীরও গিয়েছি, এমন কি চৌদ্দ বছর মুম্বাই পূর্ব বান্দ্রা বাহরাম নগর মাদ্রাসা রেজবিইয়া , এবং মসজিদে রেজবিইয়াতে কর্মরত ছিলাম। করাচী দুই বছর বাটোবা  আঞ্জুমান-ই হিমাইতে ইসলাম নামক সংস্থার ইমাম হিসেবে এবং  সৌদি আরব দু বছর কর্মরত ছিলাম। এ সুবাদে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানে যেমন তাবলাগী অনুষ্ঠান, তাবলীগ করা ফরজ কারণ আল্লাহ মহামানবগণের মাধ্যমে তাবলীগ  করিয়েছেন (এজন্য ফরজ বলা হচ্ছে) বক্তাগনের বিভিন্ন বক্তব্য শ্রবণ করতাম তাদের কর্মগুলো প্রত্যক্ষ করতাম কোথাও কোন অনুষ্ঠানে নবী (দঃ) এর দরুদ এবং সালাম এবং কোরআন পাঠ করতে প্রত্যক্ষ দর্শন বা শ্রবণ করিনি। তাই এতে আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে, আল্লাহর একটি বিশেষ অতি আবদার জনীত বাণীর প্রতি, যে বাণীতে মুমীনগণকে অর্থাৎ বিশ্বাসীগণকে ডেকে বলেছেন, হে আমায় বিশ্বাসীগণ। আল্লাহর প্রেরিত ভাষায় “ইয়া আই-ইউহাল্লাজীনা আমানূ” হে আমার বিশ্বাসীগণ আমার হাবীবের ওপর “ছোয়াল্লু আলাইহি” অর্থাৎ তাঁর ওপর দোয়া দরূদ, রহমত, বারাক্বাত, করুণা সূচক শব্দ পাঠ কর। আমি এবং আমার ফিরিস্তাগণও তা করে থাকি। কিন্তু উদ্ধৃত অনুষ্ঠানাদিতে নবী (দঃ) এর ওপর সালাম এবং দরূদ এবং কুরআন পাঠ করা থেকে তারা বিরত থাকে। উদ্ধৃত বাক্যটি অর্থাৎ দরূদ এবং সালাম সূচক আল্লাহর বিশেষ আগ্রহের এবং অতি আবদারজনীত উক্তিটি পাঠ ও সালাম প্রদান থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ উদ্ধৃতোক্তিটি কে এঙ্কার করা তথা আল্লাহকে এঙ্কার করা, আল্লাহ প্রদত্ত একটি বাক্য বা আদেশকে অবহেলা বা এঙ্কারকারী অমুসলীম হিসেবে গণ্য, তাই মস্জিদে প্রবেশ করা তার জন্য কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ বা হারাম হয়ে যায়। তারা দরূদ এবং সালাম পাঠ থেকে, কেন বিরত থাকে তাদের একজনকে প্রশ্ন করলে, উত্তরে যা বলে, তাতে প্রতিয়মান হয় যে, আল্লাহর প্রেরিত সে মহা পবিত্র বাণীটি তাদের কর্তৃক প্রত্যাক্ষাত হয়েছে। বিবেকবান মুমীনগণের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে যাদের কর্তৃক আল্লাহর বাণী প্রত্যক্ষাত হয়, তারা নবী মুহাম্মদ (দঃ) কর্তৃক প্রবর্তিত মস্জিদে  প্রবেশের অধিকার রাখে কি? উত্তর আসবে, না। আল্লাহর মহা পবিত্র বাণীর পূর্বোদ্ধৃতোক্তিটির পুনরাবৃত্তি।
“ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ই কাতাহু ইউছোয়াল্লুনা আলান্নাবীয়্যে- ইয়া আই-ইউহাল্লাজীনা আমানূ ছোয়াল্লু আলাইহি ওয়া সাল্লিমু তাসলীমা” আল্লাহর স্বীয়োক্তি, আমি- আমার নবী (দঃ) এর ওপর দোয়া দরূদ রহমত বারাক্বাত বর্ষণ করি এবং আমার ফিরিস্তাগণও দরূদ পড়ে অর্থাৎ করুণা বারাক্বাত রহমত বর্ষণ করে। মুমীনগণের লক্ষ্যে আল্লাহর বাণী, “হে, আমায় বিশ্বাসীগণ, তোমরাও আমার নবীর ওপর দরূদ পাঠ কর। অর্থাৎ রহমত, বারাক্বাত, করুণা-শান্তি সালামত বর্ষণ কর। উদ্ধৃত মহা পবিত্র বাণীটি যাদের দ্বারা বর্জিত হলো, তাঁরা অবশ্যাবশ্যই আল্লাহর রহমত  বারাক্বাত থেকে চির শান্তি স্বর্গময় জীবন থেকে বঞ্চিত হলো।
মিলাদ বা মাওলুদ শরীফ
বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামগণ থেকে জান্তে পেরেছি যে, “মাওলুদ বা মিলাদ” শব্দটি আরবী। বাংলা ভাষায় এর অর্থ জন্ম, আগমন, উত্থান বা পর্দাপন। স্মরণ রাখার মতো এমন সরনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এমন জন্ম সম্পর্কে কোন আলোচনা অনুষ্ঠানকে সাধারণত “জন্ম” বা মিলাদ শব্দ ব্যবহার করি। যেমন অমুক দিন তাঁর জন্ম। যাঁর গুনে মানব এবং দেশ গর্বানুভব করে এবং যাঁরা বিশেষ অতি বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এমন গুণি জন সম্পর্কে যে কোন আলোচনায় তাঁদের লক্ষ্যে সম্মান সূচক শব্দ ব্যবহার করি। যেমন উনি, অমুক বৎসর, অমুক মাসের, অমুক দিন, অমূক সময় তাঁর আগমন উত্থান বা পদার্পন ঘটে। এ নশ্বর বিশ্বে তাদের অবদান সম্পর্কিত বিষয় আলোচনার লক্ষ্যে যে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, সে অনুষ্ঠানকে একমাত্র মুসলীম সমাজে মাওলুদ বা মিলাদ শরীফ নামে সরনীয় করে রাখা হয়েছে এবং প্রায় হাজার বৎসর তা পালিত হয়ে আসছে এবং পালিত হতে থাকবে। যারা এ অনুষ্ঠানকে এঙ্কার বা বাতিল বলে জানবে তারা মুসলীম সমাজ থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ এ “মিলাদ” শব্দটি ব্যবহৃত হয় এমন জনের লক্ষ্যে যিনি সর্বস্রষ্টার বন্ধু, মানব জগতের স্রেষ্ঠ মানব এবং স্রষ্টার পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্ব শেষ তুলনাহীন অতি মহা মানব যিনি স্রষ্টার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ এবং আহমাদ” নামের উপাধিতে ভুষিত, তাঁর লক্ষ্যেই “মিলাদ” নামের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। যে কোন মুসলীম এ মিলাদ অনুষ্ঠানকে বাতিল ঘোষনা করতে পারে না। যে বাতিল করলো সে মুসলীম নাম থেকে বঞ্চিত এবং মুসলীম উপাসনালয় মসজিদে এবং কাবা বা মসজিদে হারাম বায়তুল্লাহতে প্রবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। মিলাদকে অবমূল্যায়ন তথা ইসলাম ধর্মকে অবমূল্যায়ন করার সমান।
কোন মহা ব্যক্তিত্বের অধিকারী ব্যক্তি পৃথিবী থেকে গমন করার পরই তাঁর ব্যক্তিত্বের এবং কর্মের ও অবদানের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, জীবদ্দশায় নয়। তাঁর আগমন থেকে গমনের মধ্যবাগে অর্থাৎ জীবনকালে যা সংঘটিত হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করা একান্ত ফরজ অন্যথা সে ধর্ম, সে জাতির ধ্বংস অবধারিত। মহান ব্যক্তিগণের ক্রিয়া কর্ম এবং বিশ্বের প্রতি তাঁদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান পালিত করা, ভবিষ্যত প্রজন্মদের জন্য দিক নির্দেশনা। আল্লাহর সৃষ্টি এ বিশ্ব জগতে অসংখ্য প্রাণের গমনাগমন হচ্ছে। মহাপ্রলয় পর্যন্ত হতে থাকবে। এ সংখ্যাহীন প্রাণী গুলোর গমনাগমন সম্পর্কে ডাক, ঢোল বাজিয়ে সাজন সাজিয়ে আচারানুষ্ঠান পালিত হয় না। কারণ প্রানীগুলোর মধ্যে জীবন জীবিকার, শান্তি শ্রীঙ্খলার, সভ্যতার আদর্শ সমাজ এবং আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের পথ নির্দেশনার নির্দেশক কোন বিধান বাণী আসেনি। তাই প্রাণী গুলোর জন্ম বা গমনাগমন সম্পর্কিত অনুষ্ঠানাধি পালিত হয় না। কোন বিশেষ জনের আগমন এবং গমন উপলক্ষে দিবস পালিত হওয়ার কারণ হলো, তাঁদের মাধ্যমে স্রষ্টা জগত বাসিকে কি দিয়েছে। সমাজ রাষ্ট্র এবং জাতির প্রতি তিনি কি অবদান রেখে গেলেন? সৃষ্টি জগতের এবং মানব জাতির মুক্তির লক্ষ্যে, যখন বিবেকবান গুনি জনদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়, তখন তাঁদের অবদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেই তাদের আগমন এবং গমন দিবস পালিত হয়। যেন তাঁদের অবদানের দিকে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মগণের দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে শান্তি সুখের জীবন জীবিকার পথ উন্মুক্ত রাখতে পারে। এ নশ্বর জীবন পথ অতিক্রম করে মর্ত থেকে অমর্তে সহজ ভাবে গমন সম্পন্ন করতে পারে। উদ্ধৃত গুনিজনগণের গমনাগমন অর্থাৎ জন্ম, মৃত্যু উপলক্ষে অনুষ্ঠানাধি পালনের মাধ্যমে তাঁদের জীবন বৃত্তান্ত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আরবী ভাষায় এ অনুষ্ঠাকেই মাওলুদ বা মিলাদশরীফ বলা হয়। আপ্রলয় পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান পালিত হতে থাকবে। এ অনুষ্ঠান ইসলাম প্রচারে বিশেষ অবদান রাখে। যত দিন এ মিলাদ অনুষ্ঠান পালিত হতে থাকবে, ততদিন মর্ত জগতে শান্তি শৃঙ্খলার আলো জ্বলতে থাকবে। তাই সর্ব স্রেষ্ট এবং সর্বশেষ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সর্ব স্রেষ্ট বিশ্বমানবের মুক্তিরালো, মহা গ্রন্থ, আল ক্বুরআন” নামের মুক্তি পথ নির্দেশনা মূলক সংবিধানটির ওপর গুরুত্বারোপ করেই তাঁর আগমন বা জন্ম এবং গমনের দিন, সময় নির্ধারণ করে, যে অনুষ্ঠান-অনুষ্ঠিত হয়, তা মিলাদ বা মাওলুদ শরীফ নামেই অনুষ্ঠিত হয় এবং হতে থাকবে তাঁরই কৃত কর্ম আদর্শ এবং অবদান স্মরণ লক্ষ্যে।
বর্তমানে দ্বীনের দাওয়াত নামক ইসলাম প্রচারানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু যাঁর মাধ্যমে ইসলাম নামক মহা পবিত্র ধর্ম অর্থাৎ পার্থিব জীবন জীবিকার এবং সুস্থ সুন্দর সমাজ রাষ্ট্র গঠনের নীতি নিয়ম অর্থাৎ সংবিধান প্রাপ্ত হয়েছে, সে সর্বশ্রেষ্ঠ সর্বশেষ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি সালাম এবং শ্রদ্ধার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যে সালাম শ্রদ্ধা তাজীম বা সম্মান সম্পর্কে স্বয়ং সৃষ্টি কর্তা অতিব গুরুত্ব সহকারে তাঁর প্রদত্ত মহা গ্রন্থের ২২ (বাইশতম) পারা,সূরা, আহজাবের ৫৬ (ছাপান্নতম) বাক্যে তাঁরই বিশ্বাসীগণের প্রতি আদেশ প্রদান করেছেন। পরিলক্ষিত হচ্ছে যে উদ্ধৃত বাক্যটি সম্পূর্ণ রূপে লঙ্ঘীত হচ্ছে। স্রষ্টার যে কোন আদেশ যার দ্বারা লঙ্ঘীত হবে। সে ব্যক্তি স্রষ্টার বাণী বা গ্রন্থের অন্তর্ভূক্ত থাকবে না। “সাল্লেমু তাসলীমা” এ শব্দ দ্বয় মহান আল্লাহর অতি প্রিয় মহা আদেশ বাণী যাঁর অর্থ তত্ত্ব- তথ্য বর্ণনা দেয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। যা টুখানি বুঝি “সাল্লেমু তাসলীমা” অর্থে বুঝানো হচ্ছে যে, সম্মানের সাথে সালাম প্রদর্শন কর। এ বাণীটির মধ্যে রয়েছে। শান্তি. রহমত, বারাক্বাত করুণা এমন একটি মহা মূল্যবান বাণী নবী (দঃ) এর ওপর বর্ষন করতে তাঁর বান্দাগণের প্রতি বিশেষ আদেশ প্রদান করছেন। এ মহা মূল্যবানোক্তিটি উচ্চারণ করতে মুসলীম দাবীদার একটি অংশ অনিহা প্রকাশ করে। সে অংশের এক ব্যক্তিকে যখন প্রশ্ন করলাম ভাই, আপনারা নবী (দঃ) এর প্রতি “ইয়া নাবী” শব্দ উচ্চারণে অনিহা প্রকাশ করেন কেন? উত্তরে সে বলে, “ইয়া” শব্দটি উচ্চারিত হয় তখন, যখন যাকে “ইয়া” বলে সম্বোধন করবো, তিনি যদি আমার সামনে বা সম্মুখে উপস্থিত থাকেন। নবী (দঃ) আমাদের সম্মুখে উপস্থি নেই বলে “ইয়া নাবী” বলা হয় না, কিন্তু আল্লাহ বলেছেন আমার নবী (দঃ) এর ওপর সম্মানের সাথে সালাম প্রদর্শন করার জন্য। পূর্বেই উদ্ধৃত হয়েছে, আল্লাহর একটি বানী লঙ্ঘীত হলে, আল্লাহর মহা গ্রন্থই লঙ্ঘীত হলো। যেখানে আল্লাহ বলেছেন “জালিকাল কিতাবু লারাইবা ফীহ্” অর্থাৎ এ গ্রন্থে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই। এ গ্রন্থ পুঙ্খানূ পুঙ্খরূপে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত।